
হালের আলোচিত অভিনেত্রী ও গায়িকা রাফিয়াত রশিদ মিথিলা। অভিনয়ের মাধ্যমে একই সঙ্গে দুই বাংলার দর্শক ও ভক্তদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছেন তিনি। অভিনয়ের পাশাপাশি ব্যক্তিগত জীবনে বিভিন্ন ঘটনা জন্ম দিয়ে প্রায় আলোচনার শিরোনামে থাকেন তিনি। সম্প্রতি গায়ক তাহসান সঙ্গে বিচ্ছেদের পর নির্মাতা সৃজিত মুখোপাধ্যায়কে বিয়ে করে ব্যাপক আলোচিত হন। ব্যক্তি জীবনে মহান ভাষা দিবসের প্রসঙ্গ তুলে যা বললেন অভিনেত্রী রাফিয়াত রশিদ মিথিলা।
আজ ২১শে ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বাংলাদেশের অন্যান্য মানুষের মতো অভিনেত্রী মিথিলারও এই দিনটি রয়েছে তার সত্তায়। এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানিয়েছেন তিনি।
মাতৃভাষা বাংলার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে হিন্দুস্তান টাইমস বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অভিনেত্রী, লেখক ও সঙ্গীতশিল্পী রাফিয়াত রশিদ মিথিলা বলেছেন, ২১ ফেব্রুয়ারি আমার নিজের ভাষা দিবস, বাংলা ভাষা দিবস। যেদিন বাংলাদেশের ভাষা শহীদরা বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ উৎসর্গ করেছিলেন সেই দিনটির গুরুত্ব আমার কাছে সবচেয়ে বেশি। বাংলা শুধু আমার ভাষা নয়, বাংলা আমার পরিচয়। আমি একজন বাংলাদেশী মেয়ে, আমার সর্বাঙ্গে বাঙালি। একটি ভাষার নাম নিয়ে একটি দেশ তৈরি হয়েছে, আমার জাতিগত পরিচয় এই বাংলা ভাষাকে ঘিরেই। আর যারা এই ভাষার জন্য জীবন দিয়েছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। তাই ২১শে ফেব্রুয়ারি আমার আবেগের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
অভিনেত্রী বলেন, আজকাল কথা বলতে গেলে ইংরেজি মিশে যায়। সেটাও শিক্ষা ব্যবস্থার কারণে। কারণ অনেকেই ইংরেজি মাধ্যমে পড়ে। এ কারণে অনেক শিশু সাবলীলভাবে ইংরেজি বলে। বিশ্বায়নের এই যুগে বাংলাদেশের শিশুরা ছোটবেলা থেকেই ইংরেজি বলছে, ছবি দেখছে, গান শুনছে। শুধু ইংরেজি কেন, অন্যান্য ভাষার সাথেও পরিচিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, কোরিয়ান ব্যান্ডগুলি অনেকের কাছে খুব পরিচিত, কোরিয়ান নাটকগুলি খুব পরিচিত এবং জাপানি, ফ্রেঞ্চ, আরবি এবং হিন্দিও রয়েছে। ইংরেজি বিশ্বের যে কোনও জায়গায় ব্যবহার করা যেতে পারে, তাই এটি এখন শেখানো হয়। আমি আসলে মনে করি এক ভাষার সাথে অন্য ভাষার মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। তবে মাতৃভাষাকে সঠিকভাবে জানতে, বলতে, পড়তে, শিখতে এবং সম্মান করতে হবে।
নিজের উদ্যোগ নিয়ে মিথিলা বলেন, আমিও শিল্পী হিসাবে এখন একটা ছোট্ট উদ্যোগ নিয়েছি। ছোটদের জন্য বাংলায় গল্পের বই লেখা শুরু করেছি। এটি ৪ থেকে ৮ বছরের শিশুদের জন্য। আমি বাচ্চাদের সাথে কাজ করি। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত আমার চারটি বই প্রকাশিত হয়েছে। আর সেটা বাংলায়। কারণ, বাংলায় শিশুদের জন্য আগের মতো ভালো বই পাওয়া যায় না। তাই বাংলায় লেখার সিদ্ধান্ত নিলাম। ‘আইরা ও আর মায়ের অভিযান’ নামে একটি ধারাবাহিক শুরু করেছি।
মিথিলা আরও জানান, দুটি সিরিজ বের হয়েছে। আমি এটি লিখেছি কারণ আমার মেয়ে ইরা এবং আমি একসাথে অনেক ভ্রমণ করেছি। আমাকে আমার কাজের জন্য আফ্রিকা যেতে হয়, আমাকে বিভিন্ন দেশে যেতে হয়, আমি সেই অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে লিখছি, তাছাড়া আমি বাংলা নিয়েও থাকি, আমি উভয় বাংলাতেই অভিনয় করছি, আমি বাংলায় গান লিখেছি এবং গেয়েছি, বাংলা আমার জন্য স/ব থেকে আগে। একজন শিল্পী হিসেবে এবং একজন ব্যক্তি হিসেবেও আমি আমার বাংলা ভাষার জন্য এটাই করার চেষ্টা করছি।
শৈশবের পহেলা ফেব্রুয়ারির কথা মনে করে এই অভিনেত্রী বলেন, ছোটবেলা থেকেই বাবা আমাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে নিয়ে যেতেন। আমি যখন ছোট ছিলাম, ভিড়ের মধ্যে দেখতে পেতাম না, আমার বাবা আমাকে কোলে তুলে, সেই শহীদ মিনারে মানুষের শ্র/দ্ধা নিবেদন দেখাতেন। তারপর লাইন দিয়ে সেখানে গিয়ে ফুল দিতাম। পরে আমি যখন বড় হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি, আমি নিজেও এই দিবসটি পালন করি।
তিনি বলেন, ২১শে ফেব্রুয়ারি শোকের দিন, কারণ এই দিনটি বহু ভাষার শহীদদের রক্তে রাঙানো, কিন্তু একই সঙ্গে এই দিনটি আমাদের অহংকার, এই দিনটিতে আমাদের উৎসব হয়। এই দিনে আমরা আমাদের মাতৃভাষা বলার অধিকার ফিরে পেয়েছি, যাইহোক, বাংলাদেশ দীর্ঘকাল ধরে থাকলেও বাংলা ভাষা আন্দোলনের পরই বাংলাদেশ প্রকৃত স্বীকৃতি পায়।
প্রসঙ্গত, ভাষা দিবসের প্রতি আলাদা শ্রদ্ধা ও সম্মানের কথা প্রকাশ করেন অভিনেত্রী রাফিয়াত রশিদ মিথিলা। তিনি বলেন, যারা ভাষার জন্য আত্মত্যাগ করেছে তাদের প্রতি শ্রদ্ধার জানায় ও গর্ববোধ করি।