খালেদা জিয়া রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়া নিয়ে এবার ভিন্ন ইঙ্গিত দিল বিএনপি

নির্বাচনকে সামনে রেখে নানা ইস্যুতে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম করছে বিএনপি। যদিও সরকার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে বিএনপির শীর্ষ দুই নেতাই দন্ডপ্রাপ্ত আসামি দলের নেতৃ্ত্ব দেবেনকে। এমন প্রসঙ্গে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে দলের নেতৃত্ব দিবেন বেগম খালেদা জিয়া এবং দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া।অপর দিকে বেগম খালেদা জিয়া দন্ড প্রাপ্ত হওয়ায় নির্বাচন করতে পারবেন আইন অনুযায়ী কিন্তু তার রাজনীতি করার বিষয়ে কোনো বাধা নেই বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। বেগম খালেদা জিয়া রাজনীতি করবেন কিনা মন্তব্য করে বিএনপির পক্ষ যা জানানো হলো।

রাজনীতি না করলেও আলোচনায় রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। সরকারের মন্ত্রীরা বলছেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ না থাকলেও রাজনীতি করতে বিএনপি নেত্রীর কোনো বাধা নেই। তবে বিএনপি নেতারা বলছেন, বেগম জিয়া পরিবেশ সৃষ্টি হলে সক্রিয় হবেন। তার রাজনীতি না করার বিষয়ে সরকারের বক্তব্যের পেছনে তারা ঝামেলা দেখছেন।

পাঁচ বছর ধরে রাজনীতির বাইরে রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্তির তিন বছর পরও তাকে রাজনীতিতে সক্রিয় হতে দেখা যায়নি। তবে এই সময়ে মধ্যে তিনি প্রায় ছয় মাস হাসপাতালে ছিলেন। বেগম জিয়া বর্তমানে গুলশানে নিজ বাসায় রয়েছেন।

আওয়ামী লীগ নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিম দাবি করেছেন, বেগম জিয়াকে রাজনীতি না করার শর্তে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। গত ২৬ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ দাবি করেন।তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজনীতি করবেন না এমন নিশ্চয়তা দিয়ে তাকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তার দাবির পর সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন।

এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, খালেদা জিয়াকে রাজনীতি করতে বাধা দেওয়া হয়নি, তবে তিনি আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।

বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেন কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক।

তিনি বলেন, রাজনীতি করতে তার কোনো বাধা নেই, জেল থেকেও রাজনীতি করতে পারেন। তিনি তার দলকে নির্দেশনা দেবেন, তবে তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কিনা তা নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে। বুধবার সরকারের দুই মন্ত্রীও একই কথা বলেছেন।

তাহলে বেগম জিয়া কেন রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন না? দলটির নেতারা বলছেন, অনুকূল পরিবেশ হলে তিনি ফিরবেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু গণমাধ্যমকে বলেন, চেয়ারপারসন রা/জনীতিতে সক্রিয় হননি। কারণ, তাকে অন্যায়ভাবে আটক করা হয়েছে। রাজনীতির পরিবেশ তৈরি হলে তিনি অবশ্যই রাজনীতি করবেন। এ বিষয়ে আইনমন্ত্রীর কোনো মন্তব্য করার প্রয়োজন নেই। আইনমন্ত্রী যদি সৎ হন, আমানউল্লাহ আমান একটা বক্তৃতা দেওয়ায়, তাহলে সড়ক বন্ধ করা হলো কেন?

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, বিএনপি নেত্রীর রাজনীতি করার ও দল পরিচালনার শারীরিক সক্ষমতা রয়েছে।

মিন্টু আরও বলেন, ভাবুন বেগম জিয়া তাদের (শক্তিশালী) কথার ওপর ভিত্তি করে অফিসে গেলেন, তারা বলবেন বেগম জিয়ার রাজনীতি করার কথা নয়। আমাদের কাছে কোনো কাগজপত্র নেই, তাকে আবার গ্রেপ্তার ক/রা নেওয়া হলো।

দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো যথেষ্ট সাহস, শক্তি ও মনোবল আছে বলেও জানান তিনি।

বিএনপি নেতারা দাবি করেন, সরকারবিরোধী আন্দোলন থেকে জনগণের দৃষ্টি সরাতে বেগম জিয়ার রাজনীতি করার বিষয়টি ইস্যু করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দু/র্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয়।

বিএনপি নেত্রীকে মুক্ত করতে হাইকোর্টে দলীয় নেতাদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। পরে পরিবারের পক্ষ থেকে ‘মানবিক আবেদন’ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে যান খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার। স্বজনদের আবেদনে প্রধানমন্ত্রী ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। ২০২০ সালের ২৪ মার্চ, সরকার সাজা স্থগিত করে এবং শর্ত সাপেক্ষে খালেদা জিয়াকে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেয়। পরদিন তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ১৮ সেপ্টেম্বর, ষষ্ঠবারের মতো অস্থায়ী মুক্তির মেয়াদ ছয় মাসের জন্য বাড়ানো হয়েছিল। ফলে ২৫ মার্চ পর্যন্ত খালেদা জিয়াকে কারাগারে যেতে হবে না। গুলশান-২-এর ৭৯ নম্বর সড়কের ফিরোজা বাসায় অবস্থান করছেন খালেদা জিয়া। এর পাশেই ৮৩ নম্বর রোডে তাঁর রাজনৈতিক কার্যালয়। কিন্তু প্রায় তিন বছরে একবারও তিনি সেখানে যাননি।

প্রসঙ্গত, রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি হলে রাজনীতি ফেরার কথা জানিয়েছে বিএনপির শীর্ষ নেতারা। তারা বলেন, সরকার নতুন করে নেত্রীর রাজনীতির করবে কিনা সেটিকে ইস্যু করার চেষ্টা করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *