
অভিনয়ের আড়ালে তারকাদের বাস্তব জীবনের কাহিনী সিনেমাকেও হার মানায় তার প্রমাণ পাকিস্তানি অভিনেত্রী শবনম। জীবনে ভ/য়ংকর পরিস্থিতির মুখে পড়েন এই অভিনেত্রী যা তাকে আস্তে আস্তে নিঃশেষ করে দেই। যার কারণে শেয পর্যন্ত পাকিস্তান ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে সা/মাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ/কটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন লে/খিকা মিলি সুলতানা হু/বহু পাঠকদের জন্য নি/চে দেওয়া হলো।
১৯৭৮ সালের ১৩ মে পাকিস্তানের সবচেয়ে আলোচিত হাই প্রোফাইলড ঘটনা ছিল উর্দু ছবির বিখ্যাত নায়িকা শবনমের গ্যাং রেপ। যা পাকিস্তান ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিকভাবেও ব্যাপক মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল। লাহোরের পশ গুলবার্গ এলাকায় রবিন ঘোষ-শবনম দম্পতির বাড়িতে এক মর্মান্তিক অগ্নিপরীক্ষার শিকার হয়েছিলেন তাঁরা। সাত অস্ত্রধারী শবনমের বাড়িতে ঢুকে পড়ে। প্রথমে তারা সারাবাড়ি ঘুরে ডাকাতি করে। বাড়িতে ছিল কয়েকটি আলমিরা। যেখানে শবনমের মূল্যবান সব শাড়ি ড্রেস ছিল। রুপালি পর্দায় শবনমের পরনে যেসব ঝলমলে শাড়ি দেখা যেত, সেগুলো বস্তায় ঢুকিয়ে নেয় সাতজনের সশস্ত্র ডাকাতদল। তারপর বহুমূল্যের সোনার অলংকার লু/টপাট করে। নগদ টাকাও নেয় তারা। বিখ্যাত সুরকার রবিন ঘোষ ডাকাতদল দেখে কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে পড়েন। তিনি ডাকাতদের বললেন, “আমার যা যা আছে সব তোমরা নিয়ে যাও। কিন্তু আমাদের কোনো ক্ষতি করোনা। আমার শিশুবাচ্চা ভয় পাবে”! তাদের ছেলে রনি ঘোষের বয়স তখন সম্ভবত সাত আট বছর ছিল।
কিন্তু রবিন ঘোষ শবনম দম্পতি বুঝতে পারেননি ডাকাতদলের আসল উদ্দেশ্য। তাদের লোলুপ দৃষ্টি পড়ে শবনমের উপর। তারা আসলে সেই উদ্দেশ্যেই রবিন ঘোষের বাড়িতে ঢুকেছিল। শবনমের উপর শার্দুলের মত ঝাঁপিয়ে পড়ে সাত জন্তু। তাদের নাম হল মোহাম্মদ ফারুক বন্দিয়াল, ওয়াসিম ইয়াকুব বাট, জামিল আহমদ, তাহির তানভীর, জামশেদ আকবর সাহি, আগা আকিল আহমেদ এবং মোহাম্মদ মুজাফফর। সেদিন রবিন ঘোষ ও অবুঝ শিশু রনির সামনে সম্ভ্রম হারাতে হয়েছিল ট্রু লিজেন্ড শবনমকে। রবিন ঘোষ যিনি সুরের কারিগরিতে অদ্বিতীয় ছিলেন, সেদিন তাকে পৃথিবীর “সবচেয়ে অসহায় ব্যক্তি” হয়েই থাকতে হয়েছিল। সেদিন কালজয়ী সুরের সেই মহান স্রষ্টা পারেননি তার প্রিয়তমা স্ত্রীকে রক্ষা করতে।
দীর্ঘদিন তিনি ট্রমাটাইজ হয়েছিলেন। শিশু রনির কোমল মনে বিশাল সং/ঘর্ষ হয়েছিল সেদিন। সেও ট্রমাটাইজড হয়েছিল। এরপর সাইকিয়াট্রিস্টের পরামর্শে রনিকে লন্ডনে রবিন ঘোষের ভাইয়ের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল। সেখানেই পড়াশোনা করেছে রনি। মানসিক এতো বড় এক মানসিক বিপর্যয়ের ফলে স্বাভাবিক অনুভূতি স্বাভাবিক জীবন থেকে অনেকদূরে ছিটকে পড়েছিলেন শবনম রবিন ঘোষ।
প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হকের সাথে ভালো সম্পর্ক ছিল রবিন ঘোষ-শবনম দম্পতির। শবনমের গ্যাং রে/পের ঘটনায় জিয়াউল হক ভীষণ ক্ষুব্ধ হলেন। তিনি শবনমের বাড়িতে এসে ব্যক্তিগতভাবে তাদেরকে সান্ত্বনা দিলেন। অপরাধীদের কঠিন বিচারের মুখোমুখি করবেন বলে আশ্বাসও দিয়েছিলেন। গ্যাং রেপের মুল নায়ক ছিলেন মোহাম্মদ ফারুক বন্দিয়াল। সাতজনের মধ্যে ফারুক বন্দিয়ালসহ পাঁচজনই অত্যন্ত প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান ছিল। ১৯৭৯ সালে সামরিক আদালতে ধ/র্ষকদের মৃ/ত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে গণধ/র্ষণের মামলা নথিভুক্ত না করার জন্য পুলিশের উপর প্রভাব খাটিয়ে সফল হয়েছিল। রেপিস্টরা শবনম ও রবিন ঘোষকে চাপের মুখে ফেলে ক্ষমা আদায় করে নেয়। এর ফলে নরপশুদের মৃত্যুদণ্ড আর কার্যকর হয়নি। ধ/র্ষক মোহাম্মদ ফারুক বন্দিয়াল ইমরান খানের তেহরিক-ই- ইনসাফ দলে যোগ দিয়েছিল। ইমরান খান তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়ে দলে বরণ করে নিয়েছিলেন। কিন্তু শবনমের রে/পিস্টের বিরুদ্ধে সোশাল মিডিয়ায় তীব্র নিন্দার ঝড় উঠেছিল। যার কারণে ইমরান খান বন্দিয়ালকে বহিস্কার করতে বাধ্য হয়েছিলেন।
এরপর ১৯৮৭ সাল থেকে শবনম লন্ডনকে তার আবাসস্থল বানিয়ে নিয়েছিলেন। উর্দু চলচ্চিত্র জগত থেকে তিনি অবসর নেন ১৯৯০ সালের শেষের দিকে। ১৯৯৭ সালে ভ/য়ংকর বি/ভীষিকার স্মৃতি বুকে নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন শবনম। মানসিক বিষন্নতায় ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়ে পড়েন রবিন ঘোষ। পাকিস্তানের চিত্রজগত শবনম ও রবিন ঘোষের কারণে সমৃদ্ধ হয়েছে। সেই অকৃতজ্ঞ দেশেই শবনমের মত কিংবদন্তিকে তার সম্ভ্রম হারাতে হয়েছে।
প্রসঙ্গত, যারা অভিনেত্রী শবনমের সঙ্গে এমন জঘন্য কর্মকা্ণ্ড করেছে তারে বিরুদ্ধে সঠিক বিচার না করাই ধীক্কার জানায় দেশের মানুষ মন্তব্য করেন লেখিকা মিলি সুলতানা। তিনি বলেন, লজ্জায়, ঘৃর্নায় অবশেষে বাংলাদেশে চলে আসেন অভিনেত্রী শবনম।