সুচিত্রা সেনের নাতনি হিসেবে কিঞ্চিৎ ফেভার তারা পাননি : মিলি

অভিনয় জগতে আসার পিছনে প্রত্যোকের পরিবারের সবচেয়ে বেশি অবদান থাকে। কারণ এই পেশায় সহজে কেউ আসতে পারে না বা চায় না। অভিনয়ের মাধ্যমে মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা অর্জন করা কঠিন ব্যাপার। আর সেই জন্য এই পেশায় আসার পিছনে পরিবারের সদস্যদের বড় ভূমিকা রাখে। এ প্রসঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন লেখিকা মিলি সুলতানা হুবহু পাঠকদের জন্য নিজে দেওয়া হলো।

১৯৭৯ সালে মহারাষ্ট্রের মুম্বাইয়ে একটি ক্লিনিকে জন্ম হয় রাইমা সেনের। উপমহাদেশের বাংলা সিনেমার অপরাজিত সম্রাজী লাস্যময়ী সুচিত্রা সেনের বড় নাতনি রাইমা সেন। যখন অপারেশন থিয়েটারে ক্ষীণ স্বরে নবজাতকের কান্নার শব্দ শোনা যাচ্ছিলো দিদিমা সুচিত্রা সেনের কাজল কালো চোখদু’টো আনন্দে অশ্রুসজল হয়ে উঠেছিলো। ডাক্তারের কোল থেকে সুচিত্রা সেন বুকে জড়িয়ে নিলেন তাঁর আত্মার অংশ রাইমা সেনকে। সেদিন হাসপাতালে আরও ছিলেন রাইমার বাবা ভারত দেব ভর্মা। তিনি জয়পুরের মহারাণী গায়ত্রী দেবীর আত্মীয়। ১৯৭৮ সালে মুনমুন সেনের বিয়েতে রানীমাতা যোগ দিয়েছিলেন। সেদিন সুচিত্রা সেনের আদর আপ্যায়নে মুগ্ধ হয়েছিলেন মহারাণী গায়ত্রী দেবী। রাইমা মুনমুন সেনের প্রথম সন্তান। তাই তার জন্ম হওয়ার খুশিতে নানীমা সুচিত্রা জাঁকজমকপূর্ণ পার্টির আয়োজন করেছিলেন। শোনা গেছে গাইনোকলজিস্টকে স্বর্ণের ঝুমকা উপহার দিয়েছিলেন সুচিত্রা সেন। রাইমার জন্মের ১৪ মাস পর জন্ম হয় রিয়া সেনের। সুচিত্রা এবারও খুশি। যদিও লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে গিয়েছিলেন সুচিত্রা। তবে দুই নাতনিকে নিয়ে ছিল তাঁর একান্ত পৃথিবী। রাইমা রিয়া তাদের জন্মের পর থেকে দিদিমাকে পেয়েছে পরম বন্ধু হিসেবে। আস্তে আস্তে মুনমুনের মেয়েরা বড় হতে লাগলেন। রাইমা সেনের অনেককিছু তার দিদিমার মত ছিল। বিশেষ করে রাইমার গভীর দু’টিচোখের দিকে তাকালে মনে হয় সুচিত্রা সেনের চোখ। মুখাবয়বেও সুচিত্রার সাথে প্রচুর মিল রাইমার।

বড় হবার পর দেখা গেল রাইমা সেনের চোখের নেশায় সবাই বিমুগ্ধ!! দিদিমার মত চোখভরে কাজল পরেন রাইমা। চুলের বিন্যাস করেন তার দিদিমাকে অনুসরণ করে। ঠোঁটে বেশিরভাগ লাগান হালকা লিপস্টিক। তবে ফটোশ্যুট বা মডেলিংয়ের জন্য গর্জিয়াস লিপস্টিক ব্যবহার করেন। রাইমার সৌন্দর্যের মধ্যে অবিকল সুচিত্রা সেনকে পাওয়া যায়। এখনো যখন রাইমা সেন ছবির লোকেশানে যান তাকে দেখে অনেকেই বলে,”তোমার মাঝেই মহাতারকা সুচিত্রা সেন বেঁচে থাকবেন।” বলিউডে নেপোটিজম নিয়ে যতটা ক্ষোভ রয়েছে, বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে তার থেকে অনেকটাই কম। রাইমা সেন এ বিষয় নিয়ে খুব বিরক্ত। মহানায়িকার নাতনি হয়েও স্পেশাল কোনো ফেভার পাননি রাইমা। কঠোর পরিশ্রম করে নিজের যোগ্যতা দিয়ে একজন দক্ষ অভিনেত্রী হিসাবে জনপ্রিয় হয়েছেন রাইমা সেন। সুন্দর সাবলীল অভিনয়ে বেশ পারঙ্গমতা অর্জন করেছেন তিনি।

সুচিত্রা সেনের নাতনি হিসেবে তাকে কেউ ফেভার করেননি। একসময় বলিউডে কাজ পেতেন না রাইমা। বলিউডের প্রতি তার একধরনের অনীহা ক্ষোভ জন্মেছে। ইচ্ছা করে কয়েকজন বড় নির্মাতা তাকে ছবি থেকে বাদ দিয়েছেন। তাই বলিউড নিয়ে তার তিক্ত অনুভূতি। তিনি থিতু হয়েছেন টলিউডে। ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘’চোখের বালি’’ রাইমাকে সুঅভিনেত্রীর স্বীকৃতি দিয়েছে। দর্শক মুগ্ধ হয়েছিল তার অভিনয়ে। মূলত আর্ট ফিল্মেই বেশি অভিনয় করেছেন রাইমা সেন।

রাইমা রিয়ার কাছে দিদিমা সুচিত্রা সেন তাদের একমাত্র আদর্শ। রাইমা-রিয়ার জীবনে বহু চড়াই-উৎরাই গিয়েছে। কিন্তু সুচিত্রা সেনের নাতনি হিসেবে কিঞ্চিৎ ফেভার তারা পাননি। সুচিত্রা সেন তাঁর নাতনিদের বলতেন,”আগে নিজেকে যোগ্য করে গড়ে নাও। তারপর অভিনয়ে নামবে। তোমার প্রতিভাই তোমার তোমার আইডেন্টিটি।” যখন মহানায়িকা চিত্রজগত থেকে নির্বাসন নিয়েছেন তখনও তিনি ফ্যাশন ও সাজসজ্জা নিয়ে সচেতন ছিলেন। রাইমা দেখতেন, তার দিদিমা ঠোঁটে ন্যুড শেড ও কপালে ছোট্ট টিপ লাগিয়ে নিজের লুককে মুহূর্তে সম্পূর্ণ বদলে দিতেন। আয়নার সামনে বসে যত্ন করে খোঁপা কর‍তেন। জুঁইফুলের মালা দিয়ে খোঁপা সাজাতেন। কখনো চাঁপাফুল জড়িয়ে নিতেন চুলের বেণিতে। রাইমা তার প্রিয় ঠাম্মাকে ভীষণ মিস করেন। দিদিমার দৃষ্টিনন্দন শাড়ি গহনার বেশিরভাগই রাইমার দখলে। মহানায়িকার শাড়ি পরে ঠিক তাঁর মত সাজগোজ করে মানুষের মনে চমক সৃষ্টি করেন রাইমা। মহানায়িকাকে এত সুন্দরভাবে রিপ্রেজেন্ট আর কেউ করতে পারেননি।

প্রসঙ্গত, রাইমা সিনের অভিনয়ের আসার পিছনে তার দিদিমার অবদান থাকলেও কোনো ধরনের ফেভার পাননি মন্তব্য করেন লেখিকা মিলি সুলতানা। তিনি বলেন, নিজের যোগ্যতায় আজকের অবস্থানে এসেছেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *