
সম্প্রতি ইউক্রেন-রাশিয়া যু/দ্ধে ক্ষে/পণাস্ত্রের আ/ঘাতে নোঙর করা বাংলাদেশী জাহাজে নি/হত হন ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান। তার অকালে চলা যাওয়াটা আজও মেনে নিতে পারছে না তার পিতা-মাতা। ছেলের স্মৃতিচারণ করে আজও কান্নাকাটি করে যাচ্ছেন তার পিতা-মাতা।কিছুতেই ভুলতে পারছে না ছেলে হারানোর বৃথা। ছেলে হাদিসুর রহমানের হারানোর বৃথার প্রসঙ্গ টেনে আক্ষেপ করে যা বললেন বাবা মো. আব্দুর রাজ্জাক।
নি/হত হাদিসুরের বাবা-মা দুজনেই তাদের প্রিয় ছেলের কথা স্মরণ করে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। শুধু হাদিসুরের কথা উল্লেখ করলেই তাদের কষ্ট বহুগুণ বেড়ে যায়। তারা ভালোবাসার হাদিসুর ছাড়া কিছুই কল্পনা করতে পারে না। তাকে ঘিরেই ছিল পবিবরের স্বপ্ন।
বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজের তৃতীয় প্রকৌশলী হাদিসুর রহমানের পরিবারে এখনো শোকের ছায়া কাটেনি। হাদিসুরের মৃ/ত্যুর এক বছর পেরিয়ে গেছে। তবে হাদিসুরের সেই স্বপ্নের কুটির নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে।
গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেনে যু/দ্ধ শুরু হলে অলভিয়া বন্দরের বাণিজ্যিক কার্যক্রম স্থগিত করা হয় এবং বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ বাংলা সমৃদ্ধির ২৯ জন নাবিক সেখানে নোঙর করার সময় আটকা পড়েন। পরে ওই বছরের ২ মার্চ ইউক্রেনে বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে জাহাজটিতে রকেট হা/মলা হয়। জাহাজে আ/গুন ধরে যায়। এ হা/মলায় হাদিসুর রহমান গো/লার আঘাতে নি/হত হন।
হাদিসুরের বাড়ি বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কদমতলা গ্রামে। বৃদ্ধ বাবা-মা, বড় বোন ও ছোট দুই ভাই সহ অনেক আত্মীয়-স্বজন আছেন।
ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে ক্ষে/পণাস্ত্রের আ/ঘাতে এমভি বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজে নিহত তৃতীয় প্রকৌশলী হাদিসুর রহমানের পরিবারকে পাঁচ লাখ ডলার (প্রায় পাঁচ কোটি টাকা) ক্ষতিপূরণ দিয়েছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি)। .
গত বছরের ২৫ মে বিএসসির পরিচালনা পর্ষদের ৩১২তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী ও বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান খালিদ মাহমুদ চৌধুরী হাদিসুরের পিতা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আবদুর রাজ্জাকের হাতে ক্ষতিপূরণের চেক হস্তান্তর করেন।
গত বছরের ডিসেম্বরে বাড়ি তৈরি করে বিয়ে করার কথা ছিল হাদিসুরের। কিন্তু তিনি ফিরে আসেননি। তবে তার অন্তত একটি স্বপ্নের অগ্রগতি, স্বপ্নের কুটির নির্মাণাধীন।
হাদিসুর হারিয়ে যাওয়ার এক বছর পরেও তার পরিবার এখনও শোক কাটিয়ে উঠতে পারেনি। হাদিসুরের মা রশিদা বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে বললেন, মা তোমার মুখের ছবি দেখতে ভালো লাগে- এ কথা আর কেউ শোনে না। হাদিস আজ মাটিতে ভি/তরে পড়ে আছে। তার অনেক আশা ছিল। আজ আমাকে দুঃখের সাগরে ভাঁসিয়ে গেছে। হাদিসুরের মৃ/ত্যুর পর অনেকেই তার খোঁজ করলেও এখন অনেকেই আর তা/দের পাশে নেই।
ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুরের বাবা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মো. আব্দুর রাজ্জাক। চোখে বিষাদ আর হতাশা। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললেন, হাদিসুর ছাড়া আজ আমাদের আশপাশে কেউ নেই।
হাদিসুর ছাড়াও পরিবারের স্বজনরা যে/মন শোকাহত, তেমনি শোক কাটিয়ে উঠতে পারেননি প্রতিবেশী ও স্কুল-কলেজের সহপাঠীরা। হাদিসুরের সহপাঠী লিটন কুমার ঢালী বলেন, হাদিস বাড়িতে এলে আমাদের সঙ্গে দেখা করত। কুশল বিনিময় ক/রতো ও খোঁজ খবর নিত।
হাদিসুরের ছোট ভাই গোলাম মাওলা প্রিন্স বলেন, গত বছরও ভা/ই ছিল। ভাই আজ নেই বুক ফেটে যায়। এদিকে ভাইয়ের স্বপ্নের বাড়ি নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে। গত বছরের ডিসেম্বরের শুরুতে বাড়িতে এসে বৃদ্ধ বাবা-মাকে স্বপ্নের কুটির উপহার দেওয়ার কথা ছিল এবং বিয়ে করে বাড়িতে বউ আনার কথা ছিল। একটি স্বপ্ন সত্যি হতে চলেছে। আমাদের শুধু প্রিয় ভাই নেই। ঠিক নতুন বাড়িতে যাচ্ছি ঠিকই। কোন আনন্দ নেই।
প্রসঙ্গত, সন্তান হারানোর বৃথা কিছুতেই ভুলতে পারছেন না হাদিসুরের পিতা-মাতা স্মৃতিচারণ করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে তারা। প্রিয় সন্তানকে হারিয়ে শুধু ব্যাথার ভার বহন করছে তারা।